ভগবান_শ্রী_বিষ্ণুর_বাহন_গরুড়ের_জন্মকাহিনী...
মহাভারতে গরুড়ের জন্মের একটি আকর্ষণীয় কাহিনি আছে। প্রজাপতি দক্ষের দুই কন্যা, বিনতা ও কদ্রুর সাথে বিবাহ হলো ঋষি কশ্যপ মুনির। কশ্যপ মুনি দেবতা এবং দৈত্যকুলের পিতা হিসেবে স্বীকৃত। বিনতা ও কদ্রু ছাড়াও তার আরো দুজন পত্নী ছিলো। তাদের নাম যথাক্রমে দিতি ও অদিতি। দিতির পুত্রদের নাম ছিলো দৈত্য, আর অদিতির সন্তানদের বলা হতো দেবতা। এবার নিশ্চয় বোঝা গেলো দেব-দানবের উৎপত্তির কাহিনি?
বিয়ের পর বিনতা ও কদ্রু সন্তান প্রার্থনা করলেন কশ্যপের কাছ হতে। কদ্রু মা হতে চাইলেন হাজার নাগ সন্তানের এবং বিনতা দুই পক্ষী সন্তানের মাতৃত্ব পেতে চাইলেন। ঋষি কশ্যপ তাদের বর মঞ্জুর করলেন। যথা সময়ে তারা দুজন ডিম প্রসব করলেন।
ডিম প্রসবের পর কদ্রুর হাজার নাগ সন্তানের জন্ম হয়ে গেলো। কিন্তু বিনতার দুটি ডিম ফুটে বাচ্চাদের দুনিয়াতে আসার কোনো সংবাদই নেই! বছরের পর বছর এমনি চলে যেতে লাগলো, আর বিনতার মাতৃমন উতলা হয়ে উঠতে লাগলো।
একদিন বিনতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। তিনি তার একটি ডিম ফাটিয়ে ফেললেন। তারপর দেখতে পেলেন, ঐ ডিমের ভেতরে অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক পাখির মতো বৈশিষ্ট্যের এক অপরিপক্ক সন্তান রয়েছে। অকালে ডিম ভেঙ্গে তার জন্ম সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়ার জন্য সন্তানটি বিনতাকে অভিশাপ দিয়ে বললো,
"যতদিন পর্যন্ত না তোমার দ্বিতীয় ডিম থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, ততদিন তুমি তোমার বোনের দাসত্ব করবে।"
এই বলে সে হঠাৎ সূর্যের দিকে উড়ে চলে গেলো। তার নাম হলো অরুণ। সে সূর্যের রথের অন্যতম সারথি হলো। প্রতিদিন ভোরে উদিত হওয়া সূর্যের আলোকে আমরা "অরুণালো" বলে অভিহিত করি। এই ঘটনা থেকেই সেই নামের সার্থকতা এসেছে।
পরবর্তীতে দেখা গেলো, বিনতা একদিন তার বোন কদ্রুর সাথে পাশা খেলায় হেরে যান এবং শর্তানুসারে তাকে কদ্রুর দাসী হয়ে থাকতে হয়। এভাবেই বিনতার প্রতি দেওয়া তার সন্তানের অভিশাপ ফললো।
এরপর বহু বছর কেটে গেলে, বিনতার দ্বিতীয় ডিম হতে গরুড়ের জন্ম হয়। একেবারে তেড়েফুঁড়ে ডিম ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে গরুড় ক্রোধন্মত্ত হয়ে মহাবিশ্বে ধ্বংসের তাণ্ডব চালাতে থাকলেন। তার এই বিপুল ধ্বংসলীলা দেবতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারলো না। কিন্তু গরুড়ের বিশাল আকৃতি ও শক্তি দেখে তার প্রতি দেবতাদের ভয় জন্মালো। তারা গরুড়ের কাছে শান্তির জন্য প্রার্থনা করলে, সন্তুষ্ট হয়ে গরুড় তার আকার ও শক্তির পরিমাণ কমিয়ে আনলেন। এতে দেবতারাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। এটাই হলো গরুড় এর জন্ম কাহিনী।
হরেকৃষ্ণ 
।।


0 Comments