কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...
বিষ্ণুপুরাণ-
শ্রীবিষ্ণুপুরাণে (২য় খণ্ডে ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে) নরকের বর্ণনা―
শ্লোক : ৭ : ভ্রুণহত্যাকারী, গোবধকারী শ্বাসরুদ্ধকর রোধ নরকে যায়।
২০-২১ : পশুপাখি পলন ও ভক্ষণ করে জীবনধারণকারী, মাংস বিক্রেতা পূয়বহ নরকে মলভক্ষণ করে।
২২: ধীবর বা জেলেরা রুধিরান্ধ নরকে যায়।
২৬ : মেষ (ভেড়া )পালন ও ভক্ষণকারী, পশুপাখি শিকারীরা বহ্নিজাল নরকে অগ্নিদগ্ধ হয়।
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ-
যে জ্ঞান-দুর্বল ব্রাহ্মণ ইচ্ছাপূর্বক মৎস্য ভক্ষণ করে, সে অশুচি হয় এবং তাহার পূর্বকৃত পুণ্যবল নষ্ট হয়ে যায়।
(ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, শ্রীকৃষ্ণজন্মখন্ড, ৭৫/৫০)
এখন প্রশ্ন- পূর্ব হতে মাছ মাংস ভক্ষণকারী যদি অনুতাপীত হয়ে মাছ মাংস ভক্ষণ হতে বিরত হয়, তবে তার পাপ কি খন্ডন যোগ্য?

শাস্ত্র সে সকল ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছে- তারা যদি মাছ-মাংস ভক্ষণ হতে
বিরত থেকে কেবল বিষ্ণুপ্রসাদই ভক্ষণ করে তবে তারা ধীরে ধীরে অশ্বমেধ যজ্ঞের
ফল লাভ করবে, যার পুন্য প্রভাবে তাদের নরকগামী হতে হবে না।
যে ব্যক্তি মৎস্য মাংস ভোজনে বিরত হইয়া কেবল বিষ্ণুপ্রসাদ ভোজন করে, পদে পদে তাহার অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল হয়।
(ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, শ্রীকৃষ্ণজন্মখন্ড, ৭৫/৫১)
নারদীয় পুরাণঃ
নারদ বলেছেন, যে পরের মাংস খেয়ে নিজের পেশী বৃদ্ধি করেন সে অশেষ কষ্ট ভোগ করে।
মাংসাশী
লোক যদি মাংসাহার ত্যাগ করে তবে সে যে ফল পায় বেদ অধ্যয়ন ও সকল যজ্ঞের
অনুষ্ঠান করেও কেউ সেই ফল পায়না।মাংসভোজনে আসক্তি জন্মালে তা ত্যাগ করা
অতীব কঠিন।মাংসবর্জনব্রত পালন করলে সকল প্রানী অভয় লাভ করে।যে পরমাংস
দ্বারা নিজ মাংস(পেশী) বৃদ্ধি করতে চায় তার চেয়ে ক্ষুদ্র আর নৃশংস কেউ
নেই।।।
বিষ্ণুসংহিতায় উল্লেখ আছে,

গীতায় বলা হয়েছে,

বেদবাদরতাঃ পার্থ নান্যদস্তীতি বাদিনঃ ॥গীতা ২/৪২॥
অর্থ:- বিবেকবর্জিত লোকেরাই বেদের পুষ্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে স্বর্গসুখ
ভোগ, উচ্চকুলে জন্ম, ক্ষমতা লাভ আদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে
মনে করে। ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে, তার
ঊর্ধ্বে আর কিছুই নেই।

ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিঃ সমাধৌ ন বিধীয়তে ॥গীতা ২/৪৪॥
অর্থ:-
যারা ভোগ ও ঐশ্বর্যসুখে একান্ত আসক্ত, সেই সমস্ত বিবেকবর্জিত মূঢ়
ব্যক্তিদের বুদ্ধি সমাধি অর্থাৎ ভগবানে একনিষ্ঠতা লাভ হয় না।

ব্রহ্মচর্যমহিংসা চ শারীরং তপ উচ্যতে।।গীতা ১৭/১৪।।
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান, ব্রাক্ষণ, গুরু ও প্রাজ্ঞগণের পূজা এবং শৌচ, সরলতা, ব্রহ্মচর্য ও #অহিংসা-এগুলিকে কায়িক তপস্যা বলা হয়।

নির্মম্ নিরহঙ্কারঃ সম্ দুঃখ সুখ ক্ষমী ।।
সন্তুষ্টঃ সততম্ যোগী যতাত্মা দৃঢ়নিশ্চয় ।
ময়ি অর্পিত মনঃ বুদ্ধিঃ যঃ মত্ভক্তঃ স মে প্রিয়ঃ ।।গীতা১২/১৩,১৪||


বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি ।
শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ॥গীতা ৫/১৮॥
অর্থ:- জ্ঞানবান পণ্ডিতেরা বিদ্যা-বিনয়সম্পন্ন ব্রাহ্মণ, গাভী, হস্তী, কুকুর ও চণ্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শী হন।

ইহৈব তৈর্জিতঃ সর্গো যেষাং সাম্যে স্থিতং মনঃ ।
নির্দোষং হি সমং ব্রহ্ম তস্মাদ্ ব্রহ্মণি তে স্থিতাঃ ॥৫/১৯॥
অর্থ:- যাঁদের মন সাম্যে(সমস্ত জীবের প্রতি সমদর্শী) অবস্থিত হয়েছে,
তাঁরা ইহলোকেই জন্ম ও মৃত্যুর সংসার জয় করেছেন। তাঁরা ব্রহ্মের মতো
নির্দোষ। তাই তাঁরা ব্রহ্মেই অবস্থিত হয়ে আছেন।

সর্বভূতস্থমাত্মানং সর্বভূতানি চাত্মনি ৷
ঈক্ষতে যোগযুক্তাত্মা সর্বত্র সমদর্শনঃ ॥২৯॥
অর্থ:- প্রকৃত যোগী সর্বভূতে আমাকে দর্শন করেন এবং আমাতে সব কিছু দর্শন করেন ৷ যোগযুক্ত আত্মা সর্বত্রই আমাকে দর্শন করেন ।

সর্বভূতস্থিতং যো মাং ভজত্যেকত্বমাস্থিতঃ ৷
সর্বথা বর্তমানোহপি স যোগী ময়ি বর্ততে ॥
অর্থ:- যে যোগী সর্বভূতে স্থিত পরমাত্মা রূপে আমাকে জেনে আমার ভজনা করেন, তিনি সর্ব অবস্থাতেই আমাতে অবস্থান করেন

অবিভক্তং বিভক্তেষু তজ্ জ্ঞানং বিদ্ধি সাত্ত্বিকম্ ॥গীতা১৮/২০॥
অর্থ:-
যে জ্ঞানের দ্বারা সমস্ত প্রাণীতে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়, অনেক
জীব পরস্পর ভিন্ন হলেও চিন্ময় সত্তায় তারা এক, সেই জ্ঞানকে সাত্ত্বিক
বলে জানবে।

নির্বৈরঃ সর্বভূতেষু যঃ স মামেতি পাণ্ডব ॥॥১১/৫৫॥
অর্থ:- হে অর্জুন ! যিনি আমার অকৈতব সেবা করেন, আমার প্রতি নিষ্ঠাপরায়ণ, আমার ভক্ত, জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত এবং #সমস্ত_প্রাণীর_প্রতি_শত্রুভাব_রহিত, তিনিই আমাকে লাভ করেন।

জঘন্যগুণবৃত্তিস্থা অধো গচ্ছন্তি তামসাঃ।।গীতা ১৪/১৮।।
অনুবাদঃ #সত্ত্বগুণ-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ ঊর্ধ্বে #উচ্চতর লোকে গমন করে, রজোগুণ-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ মধ্যে নরলোকে অবস্থান করে এবং জঘন্য গুণসম্পন্ন তামসিক ব্যক্তিগণ অধঃপতিত হয়ে গমন করে।
মনুসংহিতায় কি বলেছে দেখুনঃ






শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে-

পশূন্ দ্রুহ্যন্তি বিশ্রব্ধাঃ প্রেত্য খাদন্তি তে চ তান্।।শ্রীমদ্ভাগবদ(১১/৫/১৪)
অর্থাৎ
ধর্মতত্ত্বে অনভিজ্ঞ, গর্বিত, সদা অভিমানী যে সব অসাধু নিঃশঙ্ক চিত্তে
পশুদের হত্যা করে, সেই পশু পরকালে তাদেরকেও ভক্ষণ করে থাকে।

অর্থাৎ, যক্ষ, রাক্ষস, ভূত ও পিশাচেরা মাংস আহারে অভ্যস্ত।...

ন দদ্যাদামিষং শ্রাদ্ধে ন চাদ্যাদ ধর্মতত্ত্ববিৎ।
মনান্নৈ মৎপরা প্রীতির্যথা ন পশুহিংসয়া।।
নৈতাদৃশঃ পরো ধর্ম নৃণাৎ সদ্ধর্মমিচ্ছতাম্।
ন্যাসো দন্ডস্য ভূতেষু মনো বাক্কায়জস্য।।
(ভাগবত ৭।১৫।৭-৮)
---
ধর্মতত্বজ্ঞ ব্যক্তি পুরুষ শ্রাদ্ধকর্মে আমিষ(মাছ-মাংস) অর্পন করবেন না।
এবং নিজেও ভোজন করবেন না। কারন পিতৃগণ মুনি ঋষিদের যোগ্য হবিষান্ন দ্বারা
যেরুপ প্রসন্ন লাভ করেন, সেরূপ পশু হত্যার দ্বারা নয়। সৎ ধর্মপালনে অভিলাষী
ব্যক্তির কাছে কোন জীবকে কায়মনোবাক্যে কোনরূপ কষ্ট না দেওয়ার মতো ধর্ম আর
নেই।....
পৃথিবীতে প্রাণিহিংসা করলে নরকের কোন কুন্ডে কিভাবে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয় দেখুনঃ
শ্রীকৃষ্ণদৈপায়ন
ব্যাসদেবের পূত্র শ্রীল শুকদেব গোস্বামী শ্রীপরীক্ষিৎ মহারাজের কাছে
নরককুণ্ডের বর্ণনা করেছেন,যা শ্রীমদ্ভাগবতে (৫/২৬/৫-৩৬) বর্ণিত হয়েছে!!
তার মধ্যে কয়েকটি নরক কুন্ডের বর্ননা দেখুন--












শ্রীশ্রী ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ
মাছ মাংস আহার করা এবং ক্রয় বিক্রয় করার শাস্তি কি

লোভবশে রোষবশে যেই দুষ্টজন।
জীবের জীবন ধন করে বিনাশন।।
মহাপাপী সেইজন অবনী ভিতরে।
লক্ষবর্ষ মজ্জাকুন্ডে নিবসতী করে।।
শশক হইয়া জন্মে ভূমে সাতবার।
মৎস্য রূপী সপ্তজন্ম হৈবে পুনর্বার।।
আপন তনয়া ধনে যেই অভাজন।
বাল্যাবধি রক্ষা করে করিয়া যতন।।
অবশেষে অর্থলোভী হইয়া অন্তরে।
মনোমত ধন লৈয়া তারে বিক্রি করে।।
মাংস কুন্ড নরকেতে পড়ি সেই জন।
কত যে যাতনা পায় কে করে বর্ণন।।
এখানে আরো আছে যা ভোগ করতে হবে।
জীবের
দেহে যত রোম ধরে তত বছর অত্যাচার চলবে নরকে,,ষাট হাজার বর্ষ নরকে
থাকা,সপ্ত জন্ম ব্যাধরুপে, অবশেষে তিন জন্ম শূকর হয়ে,সপ্ত জন্ম মূর্খ
হয়ে, তার পরে পাপের ক্ষয়।
মহাভারতে কি বলেছে দেখুনঃ
ভীষ্ম যুধিষ্ঠির মহারাজকে কহিলেন--

(মহাভারত,অনুশাসন মহাপর্ব,অধ্যায় ২৩,শ্লোক ২৫)

"যে
ব্যাক্তি মোহগ্রস্ত হয়ে পুত্রমাংস- তুল্য অন্য প্রাণীর মাংস ভক্ষন করে, সে
অত্যন্ত নিম্নজাত বলে পরিগণিত হয়। তাকে বহুবিধ পাপযোনিতে জন্ম নিতে হবে।
পরের শরীরের মাংস ভক্ষণ করে আপন শরীরের মাংস পুষ্ট করতে যে ইচ্ছা করে, তাকে
প্রত্যেক জন্মেই উদ্ধিগ্ন চিত্তে কাল যাপন করতে হয়। তাই আত্মকল্যাণকারীর
পক্ষে অবশ্যই মাছ-মাংসাদি ভক্ষণে বিরত হওয়াই শ্রেয়।" (মহাভারত- ১১৪-১১৫ অঃ)
"দেবগনকে
পুষ্প,যক্ষ ও রাক্ষসগনকে রক্ত মাংস, নাগগনকে সুরা, পদ্ন এবং ভূপগনকে
গুড়তিল সমন্বিত বলি তথা উৎসর্গ করতে হয়"।(মহাভারত-অনুশাসন পর্ব-৯৮ অধ্যায়)

" যারা সৌন্দর্য, সাস্থ্য,বল,আয়ু,বুদ্ধি,স্মরনশক্তি চান তাঁরা মাংসাহার ত্যাগ করেন।
মহাভারতে, বেদে-সমস্ত শাস্ত্রে যজ্ঞেও পশু হত্যা নিষেধ।

ধুর্তেঃ প্রবর্তিতং হোতন্নৈবদ্ বেদেষু কল্পিতম।।
(মহাঃ শান্তি পর্বঃ ২৬৫,শ্লোক ৯)
—সুরা, মৎস, মধু, মাংস, তালরস, স্বাগু এইসব বস্তুকে ধুর্তেরাই যজ্ঞে প্রচলিত করেছে। বেদে এসব উপযোগের বিধান নেই।

সংশয়াত্মাভিরব্যক্তৈহিংসা সমনুবর্তিত।।
(মহাঃ শান্তি পর্বঃ অঃ ২৬৫, শ্লোক ৪)
—
যে ধর্মের মর্যাদা থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে মূর্খ, নাস্তিক তথা যার আত্মা
সংশয়যুক্ত এবং যার কোন প্রসিদ্ধি নেই এইরূপ লোকই হিংসাকে সমর্থন করে।

(মহাঃ শান্তি পর্ব, অঃ ২৬৫, শ্লোক ১০)
— সেই ধূর্তেরা অভিমান, মোহ এবং লোভের বশীভূত হয়ে সেই সব বস্তুর প্রতি লোলুপতা প্রকট করে থাকে।
যজ্ঞের
মহিমা বর্ণনার জন্য পিতামহ ভীষ্ম যুধিষ্ঠির কে এক উপ্যাখান শোনান।
উপাখ্যান টি মহাভারতের শান্তি পর্বের ২৭২ নং অধ্যায়ে এসেছে। সেই উপখ্যানে
এক ব্রাহ্মণ যিনি কি না যজ্ঞে পশু বলি দেবার কথা চিন্তা মাত্রেই তার সমস্ত
তপস্যা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।

তপো মহৎসমুচ্ছিন্নং তস্মাদ্হিংসান যজ্ঞিয়া।।
(মহাঃ শান্তি পর্ব, অঃ২৭২, শ্লোক ১৮)
—-আমি
সেই পশু কে বধ করে স্বর্গলোক প্রাপ্ত করবো। এই ভেবে মৃগকে হিংসা করার
জন্য উদ্যত সেই ব্রাহ্মণের মহান তপস্যা তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই জন্য
হিংসা যজ্ঞের জন্য হিতকর নয়।
এই
জন্য বেদ আমাদের সর্বদা হিংসারহিত কর্ম করার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং আমাদের
শরীর এবং দন্তের উপযোগী খাবার হিসেবে ভাত, ডাল,যব ইত্যাদি এসব খাবারের
অনুমোদন দিয়েছে।
পশুবলি নিষিদ্ধ এর বিস্তারিত জানুন এই লিংকে -
সমস্ত বেদ থেকে রেফারেন্স দেখুন



ঋগ্বেদ ১০.৮৭.১৬-১৯

অথর্ববেদ ৬.৭০.১

অথর্ববেদ ১০.১.২৯
অনুবাদ- নিরীহের হত্যা অতি নৃশংস এক অপরাধ,কখনো মানুষ কিংবা পশুপাখি কে হত্যা করোনা।

যজুর্বেদ ১.১
অর্থাৎ পশুসমূহ অঘ্ন্যা(হত্যার যোগ্য নয়)

যজুর্বেদ ৬.১১
অর্থাৎ পশুসমূহকে রক্ষা কর।



তৌ দন্ত ব্রহ্মণস্পতে শিবৌ কৃণু জাতবেদঃ।।
(অথর্ববেদ ৬।১৪০।১)
— যে দন্ত ব্যাঘ্রের ন্যায় পিতা ও মাতাকে খাওয়ার জন্য চেষ্টা করে সেই দাঁত কে হে সর্বব্যাপক জ্ঞানের পরিপালক কল্যাণকারী করো।

এষ বাং ভাগো নিহিতো রত্নেধেয়ায় দন্তৌ মা হিংসিষ্ট পিতরং মাতরং চ।।
(অথর্ববেদ ৬।১৪০।২)
—
হে দন্ত! অন্ন খাও যব খাও মাষ কালাই এবং তিল খাও তোমার এই ভাগ উত্তম
পদার্থ ধারনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে হে দন্ত! পিতা ও মাতাকে হিংসিত করো না
[মাংসাহার থেকে দূরে থাকো]
এবং
বেদ মন্ত্রে সেই পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে যে, আমাদের দন্ত যেন
ব্যাঘের ন্যায় না হয়। কারন বাঘের দন্ত সর্বদা মাংসাহার করে থাকে। সে জন্য
আমাদের দন্ত কে ব্যাঘের ন্যায় না করে কল্যাণকারী করো।

যো অশ্বয়েন পশুনাং যতুধান।
যো অঘ্ন্যায় ভরতি ক্ষীরমগ্নে
তেষাং শীর্ষাণি হরসাপি বৃশ্চ।।
সরলার্থ
: যে দুঃখদায়ী জীব পুরুষ বধ দ্বারা প্রাপ্ত মাংস, ঘোড়ার মাংস এবং পশুর
মাংস দ্বারা নিজেকে পুষ্ট করে এবং যে গাভীর দুধকে নষ্ট করে হে অগ্নি তাহার
শিরকে নিজের বল দ্বারা ছিন্ন করো। (অথর্ববেদ ৮/৩/১৫)

গীতায় কি ভগবান নিরামিষ খেতে বলেছেন || আমিষ নিরামিষ কি || নিরামিষ খেলেও পাপ হয় ||

তবে
আমাদের জীবন ধারনের জন্য খাদ্য গ্রহন করা আবশ্যক। সে কথাই বেদে বলা হয়েছে-
''জীবস্য জীবস্মৃতম''। অর্থাৎ জীবন ধারনের জন্য এক জীব অন্য জীবকে আহার
করবে খাদ্যরূপে।
আবার বেদেই বলা হয়েছে-

বেদের উভয় বাক্যই আপাত দৃষ্টিতে স্ববিরোধী ও একে অপরের জন্য সাংঘর্ষিক।


''যজ্ঞাশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈঃ,
ভুঞ্জতে তে ত্বঘং পাপা যে পচন্ত্যাত্মকারণাত্''।।
''অর্থাৎ
ভগবদ্ভক্তেরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন, কারন তায়া যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নাদি
গ্রহন করেন। যারা কেবল স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির জন্য
অন্নাদি পাক করে তারা কেবল পাপই ভোজন করে। এবং যে সমস্ত লোকেরা তাদের আত্ম
তৃপ্তির জন্য নানা প্রকার উপাদেয় খাদ্য খায়, শাস্ত্রে তাদের চোর বলে গণ্য
করা হয়েছে।

'' আহারশুদ্ধৌ সত্ত্বশুদ্ধিঃ, সত্ত্বশুদ্ধৌ ধ্রূবা স্মৃতিঃ
স্মৃতিলম্ভে সর্বগ্রন্থীনাং ব্রিপমোক্ষঃ''।।
''অর্থাৎ
যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফলে খাদ্যসামগ্রী শুদ্ধ হয় এবং তা আহার করার ফলে জীবের
সত্তা শুদ্ধ হয়। সত্তা শুদ্ধ হবার ফলে স্মৃতি শুদ্ধ হয় এবং তখন সে মোক্ষ
লাভের পথ খুজে পায়''।
অর্থাৎ আমরা যদি পাপ করতে না চাই, আমরা যদি চোর হতে না চাই তবে
আমাদের
ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে খাদ্যদ্রব্য গ্রহন করতে হবে। ভগবানকে কোন
বস্তু নিবেদন বা অর্পণ করলে ঐ জীব হত্যার পাপ দুর হয় ভগবান সমস্ত পাপ হরণ
করে নেন।
এভাবে আমরা সমস্ত পাপ হতে মুক্ত হতে পারব। কিন্তু প্রশ্ন থাকে আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কোন খাদ্য অর্পন করবো এবং কিভাবে অর্পন করবো।


''পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি,
তদহং ভক্ত্যুপহ্বতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ''॥ ৯/২৬
''অর্থাৎ
যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে পত্র, পুষ্প ফল জল অর্পণ
করেন, আমি তাঁর সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি''।
যদি কেউ মনে করে মাছ মাংস ডিম আদি যোকোন দ্রব্য ভগবানকে নিবেদন বা অর্পণ করা যেতে পারে, তা হবে সম্পুর্ন ভুল ।

আহার বা খাদ্য দ্রব্য ত্রিগুণাত্মিকা যেমন,
রজগুনের আহার বা খাদ্যসামগ্রী হল মাছ, মাংস পিয়াজ ডিম রসুন ইত্যাদি।
তমোগুনের হল পঁচা বাসীদুর্গন্ধযুক্ত খাবার শুটকি মদ গাজা চা পান ইত্যাদি।
সত্বগুনের হল নিরামিষ, শাকসবজি, ফলমুল, শস্যাদি , দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার ইত্যাদি
এই
ত্রিগুণাত্মিকা খাদ্যের উর্ধ্বে হল গুনাতীত আহার। আর গুনাতীত আহার হল
ভগবানে নিবেদিত ভোগ, যা ভগবানের শুদ্বভক্তের প্রিয় ''মহাপ্রসাদ''।

''হে অর্জুন তুমি এই ত্রিগুনের উর্ধ্বে উঠ, গুনাতীত হও''।

যত্তপস্যসি কৌন্তেয় তৎকুরুষ মদর্পণম্” ॥গীতা ৯/২৭ ॥
অনুবাদ
: হে কৌন্তেয় ! তুমি যা অনুষ্ঠান কর , যা আহার কর , যা হােম কর , যা দান
কর এবং যে তপস্যা কর , সেই সমস্তই আমাকে সমর্পণ কর ।
শ্রীকৃষ্ণ
এখানে আদেশ দিয়েছেন , সমস্ত কর্ম যেন কেবল তার জন্যই করা হয় । জীবন
ধারণের জন্য সকলকেই কিছু আহার করতে হয় ; অতএব সমস্ত খাদ্যদ্রব্য
শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে তার প্রসাদ গ্রহণ করা উচিত।
এবার বিচার করুন আপনি কি আহার করবেন ?
আমিষ ? নিরামিষ ? প্রসাদ?


নিরামিষ
আহার করলেই যে পাপ থেকে মুক্ত হবেন তা নয় কিন্তু। নিরামিষ খেলে পাপ কিছু
কম হবে আমিষভোজীর তুলনায়। তাই সেই নিরামিষ খাদ্যকেই ভগবানকে অর্পন করে
সম্পূর্ণভাবে পাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। পাপমুক্ত না হলে আপনি ভক্তিতে
রুচি পাবেন না। থাকতো শুদ্ধ ভক্তি! গীতা, ভাগবৎ,বেদ,পুরাণ সহ সমস্ত
শাস্ত্রে ভগবানের নির্দেশ সাত্ত্বিক আহার এবং তা অবশ্যই ভগবানকে নিবেদন করে
আহার করা- তবেই ভগবান প্রীত হন। আর এইভাবে ভক্তি করতে করতে একসময় ভগবৎধামে
ফিরে যেতে পারবেন। আপনি যদি ভগবৎধাম পাওয়ার জন্য এই জড়জগৎ থেকে মুক্তিলাভ
করতে চান তাহলে অবশ্যই নিরামিষ তথা প্রসাদ আহার করতে হবে!!
হরে কৃষ্ণ


-----------------------------------------------------------------------------
পোস্টটি ভাল লাগে অবশ্যই স-কলকে শেয়ার করবেন।
প্রনিপাত
সদা
সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে
শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা
অনুভব করতে হবে না।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।
শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ....
ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ...(১০৮ বার)
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হন ...
0 Comments