শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য | রেফারেন্স সহ দেওয়া হলোঃ
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর ভক্তদের নিকট প্রকটিত হন, তখন তিনি তাঁর নানা রূপ, গুণ, দিব্য কার্যাবলী (লীলাবিলাস) প্রকাশ করেন। তাঁর এইসব রূপ, গুণ, লীলাবিলাস অনুসারে তিনি নানা নামে অভিহিত হন। যেমন-



ভগবানের এইসব বিভিন্ন নামের প্রতিটিই পরম, অপ্রাকৃত, ভগবানেরই মত শক্তিসম্পন্ন; স্বয়ং ভগবানের সঙ্গে ভগবানের দিব্য নামের কোন পার্থক্য নেই।
ভগবদ্গীতায় কেবল দর্শনতত্ত্বই নয়, ভগবান ও ভক্তের (কৃষ্ণ ও অর্জুনের) রূপ-গুণ বৈশিষ্ট্যাদিও অতিসুন্দরভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে- বিশেষতঃ তাঁদের নামের মাধ্যমে। এখানে সংক্ষেপে কিছু আলােচনা করা হল।
অচ্যুত– যিনি কখনাে তাঁর স্থিতি হতে চ্যুত হন না; যিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি হতে চ্যুত হন না। যেমন শ্রীকৃষ্ণ ভক্তবৎসল, তাই অর্জুনের রথের সারথি-মাত্র হয়ে, তার আদেশ পালন করে, তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত করে তিনি অর্জুনের প্রতি বাৎসল্য প্রকাশ করেছেন।
ভঃগীঃ - ১/২১, ১১/৪২, ১৮/৭৩।
অনন্ত– যিনি অসীম, অবিনশ্বর, অপরিমেয়, শাশ্বত;
ভঃগীঃ - ১০/২৯, ১১/১১, ৩৭, ৪৭।
অনন্তরূপ– অনন্তরূপ-বিশিষ্ট; যদিও তাঁর আদি স্বয়ং রূপে ভগবান হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ, তবু বিভিন্ন স্বাংশ প্রকাশ, অংশ-অবতার কলারূপে তাঁর অসংখ্য রূপ রয়েছে। ভঃগীঃ - ১১/৩৮।
অনন্তবীর্য– যাঁর শক্তি বা শৌর্য অসীম, অপরিমেয়; শ্রীকৃষ্ণ ষড়ৈশ্বর্যের একটি ঐশ্বর্য - 'সমগ্র বীর্য' -র অধিকারী, তাই তিনি ‘অনন্তবীর্য'
ভঃগীঃ - ১১/১৯, ১১/৪০।
অপ্রতিমপ্রভাব– যাঁর প্রভাব বা শক্তি তুলনারহিত, অপরিমেয়।
ভঃগীঃ - ১১/৪৩।
অমিতবিক্রম– যার বিক্রম বা পরাক্রম অপরিমেয়, তুলনাহীন।
ভঃগীঃ - ১১/৪০।
অরিসূদন– যিনি তাঁর শত্রুদের বিনাশ করেন (অরি = শত্রু; সূদন = হস্তা); শ্রীকৃষ্ণ কংসসহ লক্ষ লক্ষ দানব, অসূর, দূরাচারীকে বধ করেছেন। এজন্য তাঁর আরও নানা নাম রয়েছে, যেমন কেশব, মধুসূদন ইত্যাদি।
ভঃগীঃ - ২/৪।
আদিদেব– দেবতাদেরও আদি; শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত দেব-দেবীর আদি উৎস, তিনি স্বয়ং তা বলেছেন- অহং আদির্হি দেবানাং (১০/২)।
ভঃগীঃ– ১১/৩৮, ১০/১২।
ঈশ্বর– যিনি সকলকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ।
ভগীঃ ৪/৬, ১৫/১৭, ১৮/৬১।
কেশব– (১) কেশী নামক দৈত্য নিধনকারী, (২) যাঁর কেশ অত্যন্ত সুন্দর, (৩) যিনি ব্রহ্মা ও মহাদেবকে নিয়ন্ত্রণ করেন (বিশ্বনাথ চক্রবর্তী-কৃত টীকা)। ভঃগীঃ - ১/৩০, ২/৫৪, ৩/১, ১০, ১৪, ১১/৩৫, ১৩/১, ১৮/৭৬।
কেশিনিসূদন–যিনি কেশী দানবকে নিধন করেছিলেন।
ভঃগীঃ - ১৮/১।
কৃষ্ণ–(১) যিনি সকলের হৃদয়কে আকর্ষণ করেন, সর্বাকর্ষক, পরমানন্দময়, (২) যাঁর গায়ের রঙ তমাল বৃক্ষের মত, এবং যিনি মা যশােদার দ্বারা পালিত হন।
ভঃগীঃ - ১/২৮, ৩১, ৪০, ৫/১, ৬/৩৪, ৩৭, ৩৯, ১১/৪১, ১৭/১, ১৮/৭৮।
কমলপত্রাক্ষ– যাঁর চোখদুটি পদ্মফুলের পাপড়ির মত বিশাল, প্রান্তের দিকে রক্তাভ এবং দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, মনােরম।
ভঃগীঃ - ১১/২।
গােবিন্দ– (১) যিনি ‘গাে' অর্থাৎ গরু বা গাভীদের রক্ষাকর্তা; বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ গােবর্ধন ধারণ করে গাভীগণকে রক্ষা করেছিলেন; (২) যিনি সকলের ‘গাে', অর্থাৎ ইন্দ্রিয়-সমূহ আকর্ষণকারী, সকলের আনন্দদাতা।
ভঃগীঃ - ১/৩২, ২/৯।
জগতপতি–যিনি জগতের সকলের নিয়ন্তা, পালক, পােষক।
ভঃগীঃ - ১০/১৫।
জগন্নিবাস–যিনি সমগ্র জগতের আশ্রয়স্বরূপ।
ভঃগীঃ - ১১/২৫, ৩৭, ৪৫।
জনার্দন– (১) সমস্ত জীবের পালনকর্তা; (২) যিনি সমাজের অকল্যাণকারীদের ধ্বংস করেন; (৩) ভক্তিপথের বাধাবিঘ্ন যিনি ধ্বংস করেন (শ্রী বলদের বিদ্যাভূষণ-কৃত ভাষ্য)।
ভঃগীঃ - ১/৩৫, ৩৮, ৪৩, ৩/১, ১০/১৮।
দেববর–দেবশ্রেষ্ঠ; সমস্ত দেবতাদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ।
ভঃগীঃ - ১১/৩১।
দেবেশ– দেবতাদেরও ঈশ্বর, নিয়ন্তা বা প্রভু।
ভঃগীঃ - ১১/২৫, ৩৭, ৪৫।
দেবদেব–যিনি ব্রহ্মা, শিবাদি দেবতাদেরও প্রভু।
ভঃগীঃ - ১০/১৫।
পুরাণপুরুষ–যিনি আদি পুরুষ (Oldest Personality— শ্রীল প্রভুপাদ) ভঃগীঃ - ১১/৩৮।
প্রভু- (১) অধীশ্বর, (২) যিনি সমস্ত কার্য অত্যন্ত চমৎকারভাবে সুসম্পন্ন করতে সক্ষম।
ভঃগীঃ - ৫/১৪, ৯/১৮, ২৪, ১১/৪, ১৪/২১।
পরমেশ্বর– পরম, অর্থাৎ সর্বোচ্চ নিয়ন্তা;
ভঃগীঃ - ১১/৩, ১৩/২৮।
পরমব্রহ্ম– নির্বিশেষ ব্রহ্মেরও যিনি উর্ধ্বে; যিনি ব্রহ্ম তত্ত্বেরও আশ্রয় - স্বরূপ।
ভঃগীঃ - ১০/১২।
পুরুষােত্তম- (১) যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ; (২) যিনি সমস্ত মুক্ত ও বদ্ধ চিৎ-সত্তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।
ভঃগীঃ - ৮/১, ১০/১৫, ১১/৩, ১৫/১৮, ১৯।
প্রপিতামহ- যিনি পিতামহ ব্রহ্মারও পিতা (ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণের স্বাংশ প্রকাশ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভি- পদ্ম-জাত)।
ভঃগীঃ - ১১/৩৯।
বাসুদেব–(১) বসুদেবের পুত্র বাসুদেব নামে অভিহিত (২) যিনি সর্বব্যাপী এবং যাঁর থেকে সবকিছু উদ্ভূত হয়, তিনিই বাসুদেব। ভঃগীঃ - 8/১৯, ১০/৩৪, ১১/৫০, ১৮/৭৪।
বার্ষ্ণেয়– যিনি বৃষ্ণি বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন, বৃষ্ণিবংশপ্রদীপ;
ভঃগীঃ - ১/৪০, ৩/৩৬।
বিষ্ণু–(১) নারায়ণ ঃ স্বাংশ প্রকাশ চতুর্ভূজ পুরুষাবতারগণ; পরমাত্মা; (বিশ্বরূপ প্রদর্শনের পর শ্রীকৃষ্ণ প্রথম অর্জুনকে তাঁর চতুর্ভুজ বিষ্ণুরূপ প্রদর্শন করেছিলেন)। (২) যিনি জগতে সর্বব্যাপ্ত, সর্বভূতে বিরাজমান তিনি ব্রহ্মাণ্ডে অবস্থান করছেন। আবার পরমাণুর মধ্যেও অবস্থান করছেন।
ভঃগীঃ - ১০/২০, ১১/২৪, ৩০।
বিশ্বমূর্তি– যেহেতু তিনি সর্বব্যাপী, তাই তাঁর রূপ সর্বত্র ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপী বিস্তৃত, তাই তাঁর নাম বিশ্বমূর্তি (বিষ্ণু সহস্র নাম স্তোত্র - ৯০);
ভঃগীঃ - ১১/৪৬।
বিশ্বরূপ– যাঁর রূপ হল এই জগত; কিন্তু এই বিশ্বরূপ চরম সত্য নয় তা অস্থায়ী, কেননা জড় জগৎ অস্থায়ী, অনিত্য। তাই জাগতিক বিশ্বরূপের আদি উৎস হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। তিনি আদি পুরুষ; জড় জগতের সৃষ্টি - প্রলয়ে তাঁর নিত্য সনাতন স্বরূপের কোন পরিবর্তন হয় না।
ভঃগীঃ - ১১/১৬।
বিশ্বেশ্বর– বিশ্বের ঈশ্বর, নিয়ন্তা।
ভঃগীঃ ১১/১৬।
ভগবান– 'ভগ' পদটির অর্থ হল ছটি ঐশ্বর্য (সমগ্র ঐশ্বর্য, সমগ্র বীর্য, সমগ্র যশ, সমগ্র শ্রী (সৌন্দর্য), সমগ্র জ্ঞান, সমগ্র বৈরাগ্য) এবং ‘বান'- এর অর্থ 'সমন্বিত' বা আছে এমন; অতএব ভগবান শব্দের অর্থ হল যিনি পূর্ণরূপে ষড়ৈশ্বর্যের অধিকারী।
ভঃগীঃ - ১০/১৪, ১৭।
ভূতেশ– সমস্ত জীব সত্তার ঈশ্বর।
ভঃগীঃ - ১০/১৫।
মহাত্মা– সাধারণ থেকে পৃথক অত্যন্ত উন্নত- হৃদয় মহান স্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তি;
ভঃগীঃ - ১১/১২, ২০, ৩৭, ৫০, ১৮/৭৪।
মহাযােগেশ্বর হরি– সমস্ত যৌগিক ক্ষমতার পরম অধিকর্তা, নিয়ন্তা- শ্রীকৃষ্ণ।
ভঃগীঃ - ১১/১৯।
মধুসূদন– (১) যিনি মধু নামক দানবকে হত্যা করেছিলেন, (২) যিনি ভক্তের সমস্ত বিপদ দূরীভূত করেন, (৩) যিনি ভক্তের পূর্ণ ও পাপ কর্মের ফল ধ্বংস করেন (শব্দকল্পদ্রম)
ভঃগীঃ - ১/৩, ২/১, ২/৪, ৬/৩৩, ৮/২।
মহাবাহ– যাঁর বাহুদটি অমিত শক্তিশালী;
ভঃগীঃ - ১/৩, ২/১, ৪, ৬/৩৩, ৮/২।
মাধব–(১) যিনি সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রীদেবী লক্ষ্মীদেবীর পতি, অথবা যিনি বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী দেবীর পতি, তিনিই মাধব (শব্দকল্পদ্রুম) (২) যিনি যদুর পুত্র মধুর বংশে অবতীর্ণ হয়েছেন।
ভঃগীঃ - ১/১৪, ১/৩৬।
যােগেশ্বর– সকল যােগিক শক্তির অধীশ্বর; সমস্ত যােগের প্রভু।
ভঃগীঃ - ১১/৪, ১৮/৭৫।
যােগীন– যিনি যোগমায়া শক্তির অধিকারী। শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, নাহং প্রকাশ সর্বস্য যােগমায়াসমাবৃতঃ (৭/২৫)
ভঃগীঃ - ১০/১৭।
যােগেশ্বর কৃষ্ণ– সমস্ত যােগ- বিভূতির প্রভু, অধীশ্বর শ্রীকৃষ্ণ।
ভঃগীঃ - ১৮/৭৮।
যাদব– যিনি যদুরাজার বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন। ভঃগীঃ - ১১/৪১।
শাশ্বত পুরুষ– যে পুরুষ অনাদিকাল ধরে বর্তমান; যার কোন জন্ম-মৃত্যু অবস্থান্তর নেই - শ্রীকৃষ্ণ।
ভঃগীঃ - ১০/১২।
হরি– (১) যিনি ভক্তের সমস্ত দুঃখ কষ্ট হরণ করেন, (২) যিনি সমস্ত অনর্থ দূর করেন এবং প্রেমের দ্বারা ভক্তের হৃদয় চুরি করেন।
ভঃগীঃ - ১১/৯, ১৮/৭৭।
হৃষীকেশ– যিনি ইন্দ্রিয়সমূহের প্রভু বা ঈশ্বর; যাঁর অধীনে ইন্দ্রিয়সমূহ কর্মরত থাকে।
ভঃগীঃ - ১/১৫, ২০, ২৪, ২/৯, ১১/৩৬, ১৮/১।
হরে কৃষ্ণ
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো পড়ুন.....
আমাদের সমস্ত দুঃখের কারণ অজ্ঞনতা। সুতরাং জানতে হলে পড়তে হবে।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার আলোকে মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বজিজ্ঞাসা প্রশ্ন-উত্তরে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলি এবং বছরের সব একাদশির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
আরতি-উপসনা-প্রার্থনা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
সনাতন পারমার্থিক জ্ঞান সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
গুরুতত্ত্ব সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
অডিও ভিডিও ভজন-আরতি-নামকীর্তন শুনুন এবং ডাউনলোড করুন নিচের লিংকে ক্লিক করে...
0 Comments