কামকে কিভাবে জয় করবেন ?
প্রতিটি মানুষের অন্তরে রয়েছে শুদ্ধ কৃষ্ণ - প্রেম । কিন্তু এই প্রেম, ভক্তি ও শুদ্ধ চেতনা বিকৃত কামের দ্বারা আবৃত হয়ে আছে । ঠিক যেমন ময়লার দ্বারা আয়না আচ্ছাদিত থাকে । যে জীব যত বেশি মাত্রায় কামে আসক্ত , তার চেতনাও তত মলিন ।
প্রকৃতপক্ষে জড় জগতে প্রতিটি বদ্ধ জীবের প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে কাম । সব কিছুর কেন্দ্র হচ্ছে যৌন আকর্ষণ । এই জন্য জড় জগৎকে বলা হয় ‘ মৈথুনাগার ’ । জীব কৃষ্ণসেবায় বিমুখ হওয়ার ফলে যৌন শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয় এবং এই মৈথুনাগারে পতিত হয় । কিন্তু এই কাম চির - অতৃপ্ত । ঘি দিয়ে যেমন আগুন নেভানাে যায় না , বরং আরও প্রজ্জ্বলিত হয় , তেমনই কামকেও কখনও তৃপ্ত করা যায় না , বরং এই জড়জগৎরূপ কারাগারে বন্দিশালার মেয়াদ বৃদ্ধি পায় । তাই কাম জীবের শত্রুস্বরূপ , এবং সমস্ত দুঃখের উৎস ।
#ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, “হে অর্জুন! কামরুপ চিরশত্রুর দ্বারা মানুষের শুদ্ধ চেতনা আবৃত থাকে । এই কাম সবগ্রাসী আগুনের মতাে চির - অতপ্ত । কামের আশ্রয়স্থল হচ্ছে ইন্দ্রিয়সমূহ, মন এবং বুদ্বি । কাম এদের মাধ্যমে দেহাভিমানী জীবের প্রকৃত জ্ঞানকে আবৃত করে রাখে , আর জীবকে বিমােহিত করে”।
কলুষিত চিত্তকে মার্জন করার ফলে আবার শুদ্ধ চেতনা লাভ করা যায় , যেমন ধুলােপড়া দর্পণকে মার্জন করলে ক্রমশ উজ্জ্বল প্রতিবিম্ব দেখা যায় ।
হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ, শ্রবণ ও কীর্তনাদি ভক্তির অঙ্গগুলি চিত্তদর্পণ মার্জন করার পন্থা । কৃষ্ণভক্তি অনুশীলনের ফলে কাম পুনরায় শুদ্ধ ভগবৎ - প্রেমে পরিণত হয় , চেতনা নির্মল হয় । ক্রোধকেও ভগবানের সেবায় নিয়ােগ করে নির্মল করা যায় । যেমন মহাভক্ত হনুমান ক্রোধকে শ্রীরামচন্দ্রের সেবায় নিযােগ করেছিলেন ।
ভক্ত কামকে জয় করেন কারন তারা,
#খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে মঙ্গল আরতি করেন,
#তারপর হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করেন,
#সকালের প্রসাদ পেয়ে প্রচারে বের হন,
#এইভাবে সারাদিন কৃষ্ণসেবায় যুক্ত থাকেন।
জীবের প্রকৃত স্বরূপ হচ্ছে সে চিরকালের জন্য শ্রীকৃষ্ণের সেবক । তাই জীব যখন শ্রীকৃষ্ণের সেবা করতে শুরু করে , তখন তার বুদ্ধি নির্মল হয়ে ক্রমশ চিন্ময় স্তরে স্থিত হয় । তখন সে শুদ্ধ আত্মা ও ভগবানের দাসরূপে নিজের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করে ; সে তার দেহ - রূপ স্থূল জড় আবরণকে তার নিজের স্বরূপ বলে মনে করে না । এইভাবে কৃষ্ণভাবনা জাগরিত হবার সঙ্গে সঙ্গে বিকৃত কাম শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
তাই আত্মাকে যখন পরমাত্মার সেবায় নিয়ােগ করা হয় , তখন আপনা থেকেই মন , বুদ্ধি , ইন্দ্রিয়সমূহ ভগবানের সেবার নিযুক্ত হয় । চিন্ময় বুদ্ধির সাহায্যে মন ও ইন্দ্রিয়কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য নিয়ােগ করলে , আপনা থেকেই মন , বুদ্ধি সম্পূর্ণ শান্ত ও বশীভুত হয় । অন্য কোন কৃত্রিম পন্থায় তা সম্ভব নয় ।
#ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, “হে অর্জুন! তুমি ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করে সমুদয় জ্ঞান - বিজ্ঞান নাশক পাপের প্রতীক এই কামকে বিনষ্ট কর”।গীতা ৩/৪১-২
কৃষ্ণভাবনা বা ভক্তিযােগ তাই অত্যন্ত শক্তিশালী । নিষ্ঠা সহকারে ভক্তিযােগ অনুশীলনের ফলে অচিরেই পরম শত্ৰু কামকে জয় করা যায় এবং শুদ্ধ চেতনা ও সুপ্ত কৃষ্ণ - প্রেম পুনরায় লাভ করা যায়।
হরেকৃষ্ণ
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো পড়ুন.....
আমাদের সমস্ত দুঃখের কারণ অজ্ঞনতা। সুতরাং জানতে হলে পড়তে হবে।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার আলোকে মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বজিজ্ঞাসা প্রশ্ন-উত্তরে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলি এবং বছরের সব একাদশির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
আরতি-উপসনা-প্রার্থনা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
সনাতন পারমার্থিক জ্ঞান সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
গুরুতত্ত্ব সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......
অডিও ভিডিও ভজন-আরতি-নামকীর্তন শুনুন এবং ডাউনলোড করুন নিচের লিংকে ক্লিক করে...
0 Comments