শ্রী অদ্বৈত আচার্য

 

শ্রী অদ্বৈত আচার্য

শ্রী অদ্বৈত আচার্য 

শ্রী অদ্বৈত আচার্য(১৪৩৪-১৫৫৮)  বৈষ্ণব দার্শনিক। শ্রীহট্ট (বর্তমান সিলেট) জেলার নবগ্রাম-লাউড় গ্রামে এক বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। অদ্বৈতাচার্য ছিলেন চৈতন্যদেবের সহচরদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ। তাঁর পারিবারিক নাম কমলাক্ষ। একসময় তিনি নদীয়া জেলার শান্তিপুরে গমন করেন এবং সেখানকার বাবলা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মাধবেন্দ্র পুরীর নিকট দীক্ষা লাভের পর তিনি ‘অদ্বৈতাচার্য’ উপাধি পান। মাধবেন্দ্র পুরী ছিলেন চৈতন্যদেবের পরম গুরু। শ্রীচৈতন্যের জন্মের পূর্বেই অদ্বৈতাচার্য পান্ডিত্য ও ভক্তির জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তিনি ছিলেন নবদ্বীপের ভক্তদের পথপ্রদর্শনকারী।

অদ্বৈতাচার্য নিত্যানন্দের সঙ্গী হিসেবে চৈতন্যদেব প্রবর্তিত বৈষ্ণব মতবাদ প্রচারে অংশগ্রহণ করেন। তিনিই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে নিমাই (শ্রীগৌরাঙ্গ)-কে স্বয়ং ভগবান মানেন। তিনি পুরীতে রথযাত্রার অনুষ্ঠানে চৈতন্যদেবের অবতারত্ব ঘোষণা করেন। ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রীচৈতন্য শান্তিপুরে আগমন করলে তিনি বিদ্যাপতির পদ গেয়ে তাঁকে সম্ভাষণ জানান। অদ্বৈতাচার্য শান্তিপুরে কৃষ্ণমূর্তি ‘মদনগোপাল’ প্রতিষ্ঠা করেন।

অদ্বৈতাচার্যের দু সহধর্মিনী: শ্রীদেবী ও সীতাদেবী।  বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী অদ্বৈত পরিবারের বংশধর ছিলেন।

শ্রী অদ্বৈত আচার্য ছিলেন  হরিদাস ঠাকুরের গুরু। তিনি আজকের সিলেট জেলার এক গ্রামে ১৪৩৪ সালে চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের প্রায় ৫০ বছর পূর্বে আবির্ভূত হন। তিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় শান্তিপুর নামক এক শহরে তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে কাটান। তাঁর ছিল ৬ পুত্র- (অচ্চুতানন্দ, কৃষ্ণ মিশ্র, গোপাল দাস, বলরাম, স্বরূপ এবং জগদীশ)। তিনি তাঁর সন্তানদের শ্রীমদ্ভাগবত, ভাগবত পুরাণ এবং ভক্তি যোগের শিক্ষা দান করেন।

কথিত আছে অদ্বৈত আচার্য বিশ্বাস করতেন যে সমাজের দুর্দশার জন্য দায়ী মানুষের জড়জাগতিক সুখ ভোগের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলতেন একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পারেন সমাজ থেকে এই দুর্দশা দূর করতে। এই জন্য তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে আকুল প্রার্থনা করতেন তাঁর( শ্রীকৃষ্ণ) অবতার হিসেবে আগমনের জন্য। তিনি সমসময় কাঁদতেন আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শালিগ্রাম শিলার পূজা করতেন তুলসি পাতা আর গঙ্গা জল সহযোগে। তাঁর নিরন্তর আরাধনার ১৩ মাস পরে এক নয়নাভিরাম পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব হয়।

শ্রী অদ্বৈত আচার্য ভগবান শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু এবং প্রভু শ্রী নিত্যানন্দের খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। চৈতন্য মহাপ্রভু অদ্বৈত আচার্যকে বলতেন যেখানে তুমি সেখানেই বৃন্দাবন। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর সংকীর্তন আন্দোলনে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। কথিত আছে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু একাধিকবার অদ্বৈত আচার্য এবং শ্রী নিত্যানন্দ মহাপ্রভুকে বিশ্বরূপ দর্শন করান।অদ্বৈত আচার্য হলেন মহাবিষ্ণু এবং সদাশিবের সম্মিলিত অবতার।

চিত্রে ভগবান শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু অদ্বৈত আচার্যকে বিশ্বরূপ দর্শন করাচ্ছেন।

হরে কৃষ্ণ

আরো জানুনঃ 

শ্রী অদ্বৈত আচার্য

শ্রীল পুন্ডরীক বিদ্যানিধি 

সরস্বতী পূজা-পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র, প্রণাম মন্ত্র, স্তব ও প্রার্থনা মন্ত্র

ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য  

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুষ্যাভিষেক 

রামায়ণ কথা  

অহল্যা চরিত্র  

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?? 

ভূমন্ডলে তুলসীর আবির্ভাব কীভাবে হলো? 

মীরাবাঈ কে ?

 দ্রোপদীকে দেয়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ কিছু বানী

মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী ও শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ

 
 
 
 
 
 

 


Post a Comment

0 Comments